“শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ” (Early Childhood Development) বলতে মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকে আট বছর পর্যন্ত একটি শিশুর শরীর ও মনের যে পরিবর্তন ঘটে সেটাই হলো ‘শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ’ (Early Childhood Development)। শারীরিক বৃদ্ধি হলো ক্রমান্বয়ে ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকারের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হওয়া। আর মানসিক বিকাশ হলো- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার করতে পারা, ভাষা, চিন্তা-চেতনা, বুদ্ধি, মেধা, বোধশক্তি, অনুভূতি ও ভাবের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ক্রমশ অধিক সক্ষমতা অর্জন করা এবং দক্ষ হয়ে ওঠা। আর মস্তিষ্কের বিকাশ হলো- শরীরের যে সব অঙ্গ আমাদের মানসিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে সেই সব অঙ্গের বিকাশ।
শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। একটি শিশু পরবর্তী জীবনে সুস্থ-সবল, বুদ্ধিমান, উৎসাহী ও আগ্রহী হওয়ার ক্ষেত্রে এবং পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজ করার জন্য দক্ষ হয়ে উঠতে যে মজবুত ভিত্তির প্রয়োজন, তা প্রধানত মাতৃগর্ভ থেকে শুরু হয়ে জীবনের প্রথম আট বছর বয়সের মধ্যেই ঘটে থাকে। এই সময়টাকে বলা হয় ‘শিশুর প্রারম্ভিক শৈশবকাল’। শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ একসঙ্গে ঠিকভাবে হতে থাকলে সত্যিকার অর্থে শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। যেহেতু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থা থেকে আট বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের ভিত্তি তৈরি হয় সেহেতু এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় সে যা শেখে এবং যেভাবে শেখে তার ওপরই গড়ে ওঠে তার ভবিষ্যৎ বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্ব, গড়ে ওঠে তার নৈতিক, আবেগিক ও সামাজিক আচরণ। তাই শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি যেমন লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন তেমনি শিশুর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পারস্পরিক উদ্দীপনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের দেশে শিশুর প্রারম্ভিক যত্ন ও বিকাশের (ইসিসিডি) সমন্বিত নীতিমালা-২০১৩ তৈরি ও অনুমোদন করা হয়েছে।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর সূচনা হয় মাতৃগর্ভে। স্বাস্থ্য–পুষ্টি যা-ই বলি, সেটা মাতৃগর্ভ থেকে শুরু হতে হবে। এ জন্য মাতৃকালীন যত্ন দিতে হবে। এটা দিতে না পারলে গলদটা এখানেই থেকে যাবে। মাতৃকালীন যত্ন প্রতিদিন দিতে হয়। গর্ভকালীন মায়ের মানসিক দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের দেশে অনেক মা মাতৃত্বকালীন হতাশায় ভুগছেন। এ জন্য তাঁকে মানসিক প্রশান্তি দিতে হবে প্রতিদিন। মা যেন বিশ্রাম পান, ভারী কাজ না করেন—এগুলো খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভকালীন মায়ের যত্ন যদি সঠিকভাবে নিতে পারি, মাতৃকালীন পুষ্টি ঠিকমতো দিতে পারি, তাহলে গর্ভের শিশুর জন্য যে যত্ন দরকার, তা সে পেয়ে যাবে।