জাতীয় পুষ্টিসেবা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
  • slider
  • slider
  • slider
  • slider
  • slider

ইতিহাস

বাংলাদেশের পুষ্টি কার্যক্রমের ইতিহাস

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রাপ্যতা একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম কর্তব্য বলিয়া গণ্য। করিবে...'। এখন থেকে ৪৫ বছর আগে জনগণের পুষ্টি উন্নয়নে রাষ্ট্রের এ ধরনের অঙ্গীকার জাতির পিতার দূরদর্শী নীতির প্রতিফলন।

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভের পরপরই বাংলাদেশে সরকারী পর্যায়ে অপুষ্টি রোধকল্পে পুষ্টি সম্পর্কীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভুত হয়।

জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করা ও দেশ থেকে অপুষ্টি সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে 'জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান' প্রতিষ্ঠা করেন। যার মূল লক্ষ্য জাতীয় ভাবে পুষ্টি সংক্রান্ত কৌশল ও নীতি প্রণয়ন এবং পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং তা নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করা।

এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল 'বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ' গঠন করেন।

স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দায়িত্বে এসেই জাতীয় পুষ্টি প্রকল্প সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেয়। তাদের সময়েই ১৯৯৭ সালে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টিনীতি প্রণীত হয়। প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনাও ১৯৯৭ সালে প্রণয়ন করা হয়।

বাংলাদেশে প্রথম প্রধান পুষ্টি প্রোগ্রাম বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড নিউট্রিশন প্রোগ্রাম (বিআইএনপি) ১৯৯৬ থেকে

২০০২ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। বিআইএনপি এর মূল কম্পোনেন্ট ছিল এনজিওগুলোর মাধ্যমে কমিউনিটি

ভিত্তিক পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করা। বাংলাদেশের ৬১ উপজেলা এবং গ্রামীণ জনসংখ্যার প্রায় ১৬% উক্ত

প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল।

২০০২ সালে বিআইএনপি এর কার্যক্রম শেষ হবার পর ন্যাশনাল নিউট্রিশন প্রোজেক্ট এনএনপি এর সৃষ্টি হয় যা বিআইএনপি এর কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ছিল। বাংলাদেশের ১৬৭ টি উপজেলা উক্ত প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল। ২০০৬ সালে এনএনপি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা কর্মসূচীর (HPNSP) অধিভুক্ত হয় যা ২০১১ সালের জুন মাস পর্যন্ত হয়।

বিগত সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে চলমান স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টিখাত উন্নয়ন কর্মসূচি ২০১১-১৬' তে পুষ্টি

বিষয়কে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং পুষ্টি উপখাতকে ঢেলে সাজানো হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার মূলধারায় পুষ্টিকে উচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রম (এনএনপি)-কে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন)-এর সাথে সমন্বয় করে একটি একক কার্যক্রম ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিসেস (এনএনএস) নামের কার্যক্রম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জাতীয় পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে পুষ্টি বিষয়ক কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

জাতীয় পুষ্টিসেবা (এনএনএস) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীদের মাধ্যমে পুষ্টিসেবা দেয়, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর সঙ্গে সক্রিয় সম্পর্ক নিশ্চিত করতে সমন্বয় ও এডভোকেসির কাজ করে থাকে। পুষ্টি বিষয়ে একটি বহুখাত বিশিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের কৌশল বাস্তবায়ন করে যাতে পুষ্টিসেবা যথাযথভাবে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠির কাছে পৌঁছাতে পারে।আইপিএইচএন, এনএনএস-এই অপারেশনাল প্ল্যান এর বাস্তবায়ন সংস্থা হিসাবে কাজ করছে। এইচপিএনএসডিপি-র অধীনে মূলধারায় সংযোজিত পুষ্টি কার্যক্রম বর্তমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশব্যাপী পুষ্টিসেবার জোগান দেয়। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সব ক'টি জেলায় জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০১৬ পর্যস্ত এই অপারেশনাল প্ল্যানটি বাস্তবায়িত হয় ।

এছাড়াও ২০০৯ সালে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার পুনরায় দায়িত্বে আসার পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের প্রতিশ্রুতির কারণে জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টি আবার অগ্রাধিকার লাভ করে। এমডিজি ছাড়াও বৈশ্বিক অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্কেলিং আপ নিউট্রিশন SUN শীর্ষক বৈশ্বিক উদ্যোগ, যেখানে স্বল্পসংখ্যক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম থেকেই অংশগ্রহণ করেছে এবং নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১৪ সালে রোমে অনুষ্ঠিত FAO/WHO আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্মেলনের পরবর্তী দশকের (২০২৫ পর্যন্ত) কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার প্রতি পূর্ণ সমর্থন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুষ্টি উন্নয়নে তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করেছে। একইভাবে ২০১২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ২০২৫ সালের জন্য নির্দিষ্ট করা ছয়টি পুষ্টি লক্ষ্যমাত্রাও বাংলাদেশ অনুসমর্থন করেছে। এসব প্রতিশ্রুতি পূরণে বর্তমান সরকারের নিরবচ্ছিন্ন অঙ্গীকারের প্রতিফলন হিসেবে ২০১৫ সালে জাতীয় পুষ্টি নীতি প্রণীত হয়। এভাবে জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির কারণে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনার আলোকে ২০১৭ সালে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় পুষ্টিনীতির মূল পাঁচটি উদ্দেশ্য পূরণ করা:

ক) জনগণের, বিশেষত শিশু, কিশোরী, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা সহ সব নাগরিকের পুষ্টি অবস্থার উন্নতি

সাধন;

খ) বৈচিত্র্যপূর্ণ, পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন নিরাপদ, সুষম খাদ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করা,

গ) পুষ্টিকেন্দ্রিক (Nutrition specific) বা প্রত্যক্ষ পুষ্টি কার্যক্রম জোরদার করা;

ঘ) পুষ্টি সম্পর্কিত (Nutrition sensitive) বা পরোক্ষ পুষ্টি কার্যক্রম জোরদার করা;

ঙ) পুষ্টি নিশ্চিত করতে বহু খাতভিত্তিক কার্যক্রম জোরদার করা এবং সংশ্লিষ্ট সব খাতের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা।

এই উদ্দেশ্যসমূহকে সামনে রেখে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পুষ্টি সম্পর্কিত বিভিন্ন থিমেটিক কর্ম এলাকা এবং প্রধান প্রধান কর্মকান্ডের অগ্রাধিকার ঠিক করার মাধ্যমে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টিনীতির উপ কৌশলসমূহ কার্যকর করা হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন) এর আওতায় এনএনএস (জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রম) অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে দেশব্যাপী পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিদ্যমান সেবাকেন্দ্রসমূহে (মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক, স্যাটেলাইট ক্লিনিক) কর্মরত জনবল তথা সেবাদানকারীদের মাধ্যমে মা, শিশু স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরী, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের পাশাপাশি পুষ্টিসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৪র্থ সেক্টর প্রোগ্রাম (HPNSP) এর আওতায় জানুয়ারী, ২০১৭ থেকে জুন, ২০২৪ পর্যন্ত জাতীয় পুষ্টিসেবার অপারেশনাল প্ল্যানটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।